নেত্রকোনা কবিচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি দীর্ঘদিন আগেই পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

নেত্রকোনা কেন্দুয়া উপজেলায় কবিচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি দীর্ঘদিন আগেই পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

ভবনের অভাবে কমলমতি দুই শতাধিক শিক্ষার্থী পরিত্যাক্ত ঐ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে। ক্লাস করতে গিয়ে আতঙ্কের কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠে মনযোগী হতে পারছে না।

শিক্ষকরাও বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করছেন। প্রায় আট(০৮) বছর ধরে বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে ক্লাস করার পরেও শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে জুটেছে না একটি নতুন ভবন। তাও আবার শিক্ষার্থী সংকুলানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে কোন মুহূর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনার প্রাণহানীর আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে পাটেশ্বরী নদীর তীরে ৮নং বলাইশিমুল ইউনিয়নে অর্ন্তগত কবিচন্দ্রপুর গ্রামে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে নিম্নমানের কাজের কারণে নতুন ভবন নির্মাণের মাত্র ৩০ বছরের মধ্যে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটলের সৃষ্টি হয়। ২০১০ সালে বিদ্যালয় ভবনের ফাটল বেশি হওয়ায় পলেস্তরা খসে পড়তে শুরু করে। ফলে গত ৮ বছর ধরে ভবনটি ব্যাবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও এখন ঝুঁকি নিয়ে কোন মতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রায় কয়েক বছর আগে নতুন ভবনের তালিকা হলেও এখনো তার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একটু বৃষ্টি হলে পানি পড়ে ক্লাসরুমগুলো ভিজে যায়। বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। তাছাড়া অভিভাবক তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠাতে রীতিমতো ভয় পাচ্ছে। সমাপনীতে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানটি ভবনের কারণে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার কমে যাচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম থাকায় নিয়মিত ক্লাস করার সুযোগ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়ের ভবন ছাড়াও রয়েছে আরও নানা সমস্যা,,নেই অষ্টম শ্রেণী পাশ করা ম্যানেজিং কমিটি, ছাত্র-ছাত্রীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষ কম, টেবিল বেঞ্চের সংকট, গরমে শিক্ষকরা হাত পাখা নিয়ে শ্রেনী কক্ষে পাঠদান করছে, রয়েছে শিক্ষক সংকট,নেই স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট,একটু বৃষ্টি হলেই স্কুলের ছোট্ট মাঠটি পানিতে তলিয়ে যায়,  বিদ্যালয়ে প্রায় ২শত ছাত্র-ছাত্রীর পাঠদানে শিক্ষক রয়েছে ৪জন,গ্রামে বিদ্যুৎ থাকলেও স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোজন করা হয় নি।

তার মধ্যে একজন শিক্ষক আছে পিটিআই ট্রেনিংএ, একজন রয়েছে ছুটিতে,আরেকজন রয়েছে মেডিকেল এ, মাত্র দুইজন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে খন্ডকালিন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাস করানো হচ্ছে। তাও বেশীরভাগ সময় শিক্ষক না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা অলস সময় পাড় করে।

৫ম শ্রেণীর খলিল ও লিজামনি আক্তার বলে, ‘ক্লাস করতে খুব ভয় করে। কিন্তু লেখাপড়া শেখার জন্য জন্য ভয় নিয়েও ক্লাস করছি। পাচ বছর ধরে ভাঙ্গা ভবনে ক্লাস করেছি। এখনও আমাদের কোন নতুন ভবন হয় নাই।’

৪র্থ শ্রেণীর রাহাত,আবুবকর,পলি বলে, ‘আমাদের চেয়ার নাই, টেবিল নাই, আমরা নিচে বসে ক্লাস করি। এই গরমে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হয়। আমাদের ক্লাসে কোন ফ্যান নাই। আমরা নতুন একটি ভবন চাই। ছাদের পলেস্তরা খসে গায়ের ওপর পড়ে। আমরা সবসময় ভয়ে ভয়ে ক্লাস করছি। আমাদের সঠিক পড়াশুনা করার ব্যবস্থা যেন সরকার করে দেয়।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হ্যাপি আক্তার জানান, ‘গত দুই বছর আমরা মাঠে ক্লাস নিয়েছি। শিক্ষকদের বসার কোন ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনই প্রধান শিক্ষক, শিক্ষকদের ও লাইব্রেরী হিসাবে ব্যবহার করছি। এর আগে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে নিয়েছে।

এই বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা কলেজও বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আনন্দমোহন কলেজ,নেত্রকোনা সরকারি কলেজ,নটরডেম কলেজ,শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের মত বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করছে,

আমাদের বিদ্যালয় অনেক বছর ধরে শতভাগ পাসসহ জিপিএ ৫ পেয়ে বলাইশিমুল ইউনিয়নের মধ্যে বেশ কয়েকবার প্রথম হয়েছে। আমরা একটি সুন্দর ভবন চাই।

গ্রামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ,স্কুলে পড়ুয়া অনেকেই  স্কুলের বেহাল অবস্থা দেখে খুবই ক্ষোভ ও দু:খ প্রকাশ করেন  পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিনিধি, সংসদ সদস্য ও সরকারের নিকট তারা আকুল আবেদন করেন যেন খুব শীঘ্রই একটি নতুন ভবন  নির্মান করা হয়।

এমনকি এই স্কুলের ই সাবেক ছাত্র বর্তমানে ঢাকা বিশবিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মোঃ আরমান, ঢাকা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মোঃ শরীফ হাসান,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মোঃ মনির হোসেন, আনন্দমোহন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আজিজুল ইসলাম বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন একটি শিশুর জন্মের পর যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা লাভ করবে আর সেই স্থানটি যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয় এবং নির্বিঘ্নে ক্লাস করতে না পার
তাহলে তারা পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হবে,এবং আদৌ দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে না এবং পাশাপাশি তারা প্রশ্ন তুড়ে দেন যদি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে যদি  ভবনটি ধসে  পড়ে দূর্ঘটনা ঘটে যায় ও  কোমলমতী শিশুরা মৃত্যুপুরীতে ভেসে যায় তাহলে তার দায়ভার কে নিবে??

শেষে তারা বলেন আমরা এমন একটি স্কুল চাই যেখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিরাপদে সুন্দর পরিবেশে আনন্দের সাথে পড়াশুনা করতে পারবে।

এর আগে কেন্দুয়া-আটপাড়া (০৩) আসনের  সংসদ সদস্য জনাব ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার (পিন্টু) প্রায় দুই বছর পূর্বেই কবিচন্দ্রপুর গ্রামে বিদ্যুৎ উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে  বলেছিলেন ,আমরা অতি শীঘ্রই চেস্টা করবো বিদ্যালয়টির নতুন একটি ভবন করে দেয়ার।’

কিন্তু দুই বছর পরেও এর কোন তৎপরতা পাওয়া যায় নি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রাজা গৌর গোবিন্দ সিলেটে তার ইতিহাস

লোকমান হেকিম নামের অর্থ কি জানেন

নিখোঁজ সিলেট এর দপ্তরী কাম প্রহরী মাহবুবুর রহমান এর মা তিন দিন থেকে